সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৬ পূর্বাহ্ন
প্রবাসী প্রতিবেদক: দীর্ঘ ৬ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন কুয়েত প্রবাসী ইমাম হোসেন বিভিন্ন মসজিদে রাত্রিযাপন করে আসছিলেন। বৈধ কাগজ পত্র না থাকার জন্য তাকে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিল না সুচিকিৎসা ও খাবার সমস্যার জন্য দিনদিন শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বিষয়টি নজরে আসে – প্রবাসী সাংবাদিক রবিউল হক এর। তিনি মানসিক প্রবাসীকে দেশে পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা করেন। সাক্ষাৎকারে রবিউল হক বলেন – অসুস্থ ইমাম হোসেন এর খবর আমার কাছে আসা মাত্র আমি ছুটে যাই তাকে দেখার জন্য, যেহেতু মানসিক রোগী তিনি একই স্থানে থাকতেন না নানান স্থানে রাত্রিযাপন করেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার সন্ধান পাওয়া যায় , তার দেশের ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছিল না, এমত অবস্থায় খোঁজ পাই এক ব্যক্তি তাকে প্রতিদিন খাবার দেন তার সাথে যোগাযোগ করে তার বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করি এবং তার মা এর সাথে যোগাযোগ করি। অসুস্থ ভাইটির মা এর সাথে কথা বলিয়ে দিলে সন্তানকে দেখার জন্য তার মা পাগল হয়ে যায়। কান্না করে বলেন বাবাগো সন্তানকে দেশে পাঠায় দাও আমি ওরে দেখতে চাই কতদিন মুখ দেখি না , আমি মনে হয় বেশি দিন বাঁচবো না তোমরা একটা ব্যবস্থা করে দাও বাবা। সন্তানকে দেশে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান। কাগজপত্র বিহীন একজন অসুস্থ মানসিক রোগীকে দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে আমি কুয়েত বাংলাদেশ এম্বাসির সাথে যোগাযোগ করি। প্রথমত আমি একটি আবেদন করি মান্যবর রাষ্ট্রদূত বরাবর। আমার আবেদন কপি গ্রহণ করে দ্রুত অসুস্থ ইমাম হোসেনকে দেশে পাঠানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোঃ আশিকুজ্জামান স্যার। জিহুন ভাই কে ধন্যবাদ জানাবো গুরুত্বসহকারে মান্যবর রাষ্ট্রদূত এর হাতে আবেদনটি পৌঁছে দেয়ার জন্য। আবুল হোসেন স্যার সবাইকে নিয়ে আলোচনা করেন কিভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইমাম হোসেনকে দেশে পাঠানো যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ওবায়দুল হক সবার মতামতের ওপর দিকনির্দেশনা তৈরি হয়। প্রথম যে সমস্যা তাকে ধরে নিয়ে এম্বাসিতে উপস্থিত করানোর এবং ফিঙ্গার করাতে হবে যেহেতু মানসিক রোগী সহজ ছিলনা তাকে ধরে নিয়ে এম্বাসিতে যাওয়া মমিন ভাই এবং সাইফুল পাটোয়ারী ভাই এর সহযোগিতায় দেশে পাঠানোর জন্য এম্বাসিতে নেওয়া ফিঙ্গার প্রিন্ট করানো হয়। এম্বাসির কাজ শেষে অসুস্থ ইমাম হোসেনকে আমি নিয়ে আসি। খাওয়া-দাওয়ার পর সেলুনে নিয়ে আসি এবং আমার রুমে এনে গোসল করিয়ে বিশ্রামে রাখি। চেষ্টা করি তাকে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। যে মসজিদে রাত্রি যাপন করত সেখানে নিয়ে আসি, সেখান থেকে সে আবার পালিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে তার সন্ধান পাওয়া যায় এবং তাকে দেশে পাঠাতে সক্ষম হই। সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এর মাঝে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছেন। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে ধন্যবাদ জানাব তৌহিদ ভাইকে প্রথম থেকেই আমাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন – জিহুন ভাই আমার আবেদনটি দ্রুত মান্যবর রাষ্ট্রদূত স্যারের কাছে পৌঁছে দেন এবং আমাকে আশ্বস্ত করেন ভাইটিকে দেশে পাঠানোর জন্য স্যার ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একদিন পরেই আমার আবেদনটি গ্রহণ করা হয় এবং মান্যবর রাষ্ট্রদূত স্যার নির্দেশনা প্রদান করেন। আবুল হোসেন স্যার আন্তরিকতার সাথে আমাকে সহযোগিতা করেন সে সাথে ওবায়দুল হক ভাই এবং আনোয়ার হোসেন ভাই আমাকে দিকনির্দেশনা এবং ভাইটির খোঁজ নেন সব সময়। মানসিক অসুস্থ ভাইটিকে দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে এম্বাসির কর্মকর্তাদের সহযোগিতা এবং আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। ইমাম হোসেন দেশে যাওয়ার পরে ফোনে তার মায়ের সাথে যোগাযোগ হয় তার মা কান্না করে বলেন আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনারা আমার সন্তানকে দেশে পাঠিয়ে আমার মনের আশা পূরণ করেছেন। এর প্রতিদান মহান আল্লাহ আপনাদের দেবেন। ছয় বছর ধরে আমার সন্তান ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারেনি আমি আমার সন্তানের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি আজ আমি কতটা খুশি আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না আপনাদের সবার জন্য নামাজ পড়ে সবসময় দোয়া করব।